Skip to main content

আকাশের রং রঙিন

 

গল্প: আকাশের রং রঙিন 


সোহম প্রতিদিন বিকেলে ছাদে এসে নীল রঙের ঘুড়িটা উড়িয়ে দেয়। তার কাছে এই নীল রংটা যেন আকাশের একটা অংশ। ছাদের ওপার থেকে দেখা আকাশ তাকে একটা শান্তি দেয়, যদিও তার জীবনে সেই শান্তির অভাব। নিজের ভেতরের অস্থিরতাকে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে সে, কিন্তু প্রতিদিন সেই নীল আকাশের মতো তার নিজের মনটাও শূন্য লাগে।


অন্যদিকে, তৃষা প্রতিদিন হলুদ রঙের ঘুড়ি ওড়ায়। হলুদ রঙটা তৃষার কাছে সবসময়ই আশার প্রতীক। তার বাবা বলতেন, "হলুদ রং মানে, আলোর আশা।" ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে ঘুড়ি ওড়ানোর স্মৃতিগুলো আজও তার কাছে জীবন্ত। কিছুক্ষণের জন্য আকাশের দিকে তাকালে, তৃষার সমস্ত চিন্তা দূরে সরে যায়। তৃষা তার ঘুড়িটাকে যেন এক টুকরো আলো হিসেবে দেখে, যা তাকে জীবনের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।


তাদের ঘুড়ি দুটো প্রতিদিন আকাশে মেশে, কিন্তু তারা কখনোই একে অপরকে চেনে না, চিনতে চায়ও নি। জানে শুধু—সোহমের ঘুড়ি নীল, আর তৃষার ঘুড়ি হলুদ। তবে দুজনেই বুঝতে পারে, এই অচেনা আকাশের নীচে তাদের ঘুড়িগুলোর মধ্যে একটা অলিখিত সংযোগ আছে।


একদিন, তৃষার ঘুড়ির সুতো হঠাৎ ছিঁড়ে যায়। হলুদ ঘুড়িটা দিগন্তের দিকে ভেসে চলে যেতে থাকে। তৃষা অসহায়ভাবে তাকিয়ে সেই প্রান্তে, আর ঠিক সেই সময় সোহমের নীল ঘুড়িটা তার দিকে উড়ে আসে। নীল ঘুড়ির সুতোর মধ্যে তৃষা একটু ভালোলাগা খুঁজে পায়। সে ঘুড়িটা হাতে নিয়ে নীচে তাকায় এবং দেখতে পায় সোহম তাকিয়ে আছে। দুজনের চোখে মুহূর্তের জন্য দেখা হয়। কোনো কথা নেই, শুধু আকাশের নীল-হলুদ রং মিশে যায় একটুখানি।


সেদিন থেকে প্রতিদিন তাদের ঘুড়ি একসঙ্গে উড়তে থাকে। তারা এখনো কথা বলেনি, নামও জানে না, শুধু ঘুড়ির মাধ্যমে একে অপরকে চিনে গেছে। প্রতিদিন বিকেলে আকাশে নীল আর তৃষার নতুন হলুদ ঘুড়ি যেন একে অপরের সঙ্গে নিয়ম করে দেখা করে।


একদিন তৃষা সোহমের ঘুড়ির সুতোয় একটা ছোট্ট চিরকুট বেঁধে পাঠায়, "অদ্ভুত, না? আমাদের পরিচয়, আমাদের নামে নয়।" সোহম সেই চিরকুটের উত্তরে লিখে পাঠায়, "এই রঙেই আমাদের পরিচয়।"


এই চিঠির পরেও, তারা কোনোদিন মুখোমুখি হয়নি। প্রতিদিন ঘুড়িগুলো আকাশে উড়ছে, কিন্তু একে অপরের সীমানায় ঢুকে পড়ার সাহস যেন তারা পায় না। একটা অদ্ভুত দূরত্ব বজায় রেখে, তারা দুজনেই আকাশে রঙ ছড়ায়।


তাদের মধ্যে কখনো আলাপ হবে কি না, তারা আসলেই কি একদিন মুখোমুখি দাঁড়াবে, তা কেউ জানে না। হয়তো একদিন ঘুড়িগুলো উড়তে উড়তে একসঙ্গে জড়িয়ে পড়বে, হয়তো নয়। তবে আকাশে নীল আর হলুদের এই খেলাটা চলতেই থাকবে, আর সেই খেলার মধ্যেই হয়তো তাদের সমস্ত উত্তর লুকিয়ে আছে।


ঘুড়িগুলো আকাশে মিশে যায়, কিন্তু ভবিষ্যতের পথটা ঠিক কোনদিকে নিয়ে যাবে, সেটা এখনো ঝুলে রইল। আকাশটা রোজ বদলায়, কিন্তু ঘুড়িগুলোর রং কি একদিন মিলিয়ে যাবে, নাকি নতুন গল্প লিখবে—এই প্রশ্নটাই থেকে যায়।



Comments

Popular posts from this blog

ECHOES ACROSS TIME

  Aarav and Nisha arrived on Havelock Island, hoping to escape the rush of their everyday lives. The island felt untouched—quiet beaches, clear water, and a silence that seemed from another time. Their hotel was small and old, filled with antique furniture and forgotten memories. While Aarav rushed to the beach, Nisha lingered. She found a leather-bound diary hidden beneath old letters, worn with age. The diary belonged to a woman named Shivani, dated 1970. Curious, Nisha asked the hotel manager about it. He smiled gently. “It’s been here for as long as I can remember,” he said, “but no one knows how it got here.” Nisha began reading. Shivani had left everything behind—her family, her friends, even her fiancé—to live in solitude on the island. She didn’t explain why, only that she needed to step away from the life she knew. “I needed to get away from the noise,” Shivani wrote. “I wanted to be invisible, to live without the weight of anyone’s expectations. There is peace in being f...

মধুর... মধুর ধ্বনি বাজে...

 সময়টা ১৯৮৬ র বাংলা। কলকাতায় অন্যরকম মরশুম। অনেকরকম ছেঁড়া ছেঁড়া গল্প জুড়ে জীবন চলছে লোকের। এরই মধ্যে দুটো বাড়ির কথা বলি - দুটো ঘর,পাশাপাশি পাড়ায় অবস্থিত। তবু খুব যে দুই পরিবারের মধ্যে ভাব আহ্লাদ ছিল এমন বলা যায় না। একটা যোগসূত্র ছিল যেটা এতোটাই সূক্ষ্ম এবং অদৃশ্য যে সহজে ঠাহর করা যায় না। সূত্র হলো দুইটি মানুষ; সমরেশ ও ললিতা। দুইজনই কলেজে পড়ে এবং তাদের পরিবার তথাকথিতভাবে পুরনো পন্থী চিন্তাভাবনায় জর্জরিত নয়। কোন বিষয়গুলো মনে ঠাঁই দেওয়া উচিত আর কি কি জিনিস জীবন থেকে দূরে রাখলে মানুষ অনেক সুস্থ হয়ে চলতে পারবে সে নিয়ে জ্ঞান তাদের ছিল। দুইটি পরিবারে আরেকটি ভালোলাগা ছিল যেটি হলো রেডিও শোনা। বলা যায়, প্রায় সারাদিন তাদের উদ্বেগহীন জীবনে রেডিও ঘরে সঙ্গ দিয়েই যেত। এবার আসি সমরেশ আর ললিতার কাছে। সমরেশ এর বিষয় অঙ্ক আর ললিতা পড়ে ভূগোল বিভাগে। দুজনের সম্পর্ক বলতে শুধু দুজন রোজ সকালে একসঙ্গে রাস্তা পার করে, তারপর যে যার নিজ কলেজের দিকে রওনা হয়। একজন না আসা পর্যন্ত অন্যজন দাঁড়িয়ে থাকে। ওই একবার দেখার নেশা, ওইটুকু কাছে পাওয়া। এই সম্পর্কের গভীরতা কেবল ওই দুইটি মানুষ ছাড়া আর...

Perspectives On One Sided Love!

" Ek taarfa pyar ki taaqat hi kuchh aur hoti hai ....." and the rest we all know from the famous movie dialogue. Sometimes, I feel one sided love is more treated as an ignorant side! But these things are not that much colourful as the movie cuts take place. Rather, if we step into the real world, I guess, we'll see, it has a gray shade. That's right, not love, but one sided love is actually a gray shade. It is so delicate in both ways, the one who loves and the one who don't love that person. Do you feel the same way?   🌻 Honestly, I haven't faced any one sided love from my side. But I felt it from the other way, that, I became someone else's one sided love! It is not disturbing all the time, but obviously, sometimes, it is. This post will discuss from the perspective of a person who became very special for someone only one-sided way! At times, I ask myself why do these types of relationship exits? I am sure it is painful, painful to know that the one you...